Monday, July 22, 2024


চরফ্যাশনে মনির হত্যা পরিবারে শোকের মাতম।

নিজস্ব সংবাদদাতা, চরফ্যাশন, ২৩ জুন ॥ ভোলার চরফ্যাশনের হাজারী গঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত মনিরের…

By স্টাফ রিপোর্টার , in রাজনীতি , at June 23, 2021

নিজস্ব সংবাদদাতা, চরফ্যাশন, ২৩ জুন ॥ ভোলার চরফ্যাশনের হাজারী গঞ্জ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত মনিরের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। তার বোনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মনিরের মা কহিনুর বেগম ও বাবা বশির সিকদার পাগল প্রায়। বেড়ীবাঁধের ঢালে মনিরের বাড়ী। পেশায় ছিলেন জেলে। মনির ছিলেন সংসারের এক মাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৪ বোনের মধ্যে এক মাত্র ভাই ছিলেন মনির। ভাই বোনদের মধ্যে বোন ফাহিমা সবার বড়। রিনা, সালমা ও মিতু ছোট। সকল বানদের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। মনির বিয়ে করেননি। ১৫/২০ দিন আগে বাবা বশির সিকদার পাশের গ্রামে মেয়ে দেখেছেন পুত্র মনিরের জন্য। বিয়ে করা হয়নি মনিরের। ঘটনাস্হলে গিয়ে দেখা যায়, মনিরের বোন সালমা ভাই ভাই করে আত্মচিৎকার করছে, তার আত্মচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠছে, তার সাথে অপর বোনদের ও কান্নার রোল পড়ে। মা কহিনুর বেগম পুত্র শোকে পাথর হয়ে বসে আছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
বাবা বশির সিকদার নির্বাক। যে যা বলে তিনি তাই শুনেন। ঘটনার বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের বশির সিকদার বলেন- প্রথমে শুনতে পাই দুই পক্ষের মধ্যে মার পিট হয়, এনিয়ে এক পক্ষ কেচিগেট ভেঙ্গে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ গুলি ছুড়ে। সে খানে থাকা আমার ছেলে মারা যায়, পরে শুনি প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজনের গুলিতে মারা গেছে। ফুটবল মার্কার মেম্বার প্রার্থী ইয়াছি বলেন- মনির আমার সমর্থক ছিলেন। প্রতিপক্ষ ইউছুফ সিকদারের লোকজন আমার লোকজনকে মারপিট করেছে। মহিলা কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আমার এজেন্টদের বের করে দেয়। এরপর পুলিশ গুলি ছুড়ে, এতে মনির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।
স্হানীয়রা জানান, ঘটনার ২১ জুন সকালে পুরুষ কেন্দ্রে ইউছুফ সিকদারের টিউবওয়েল মার্কার সমর্থকরা ইয়াছিন মিঝির ফুটবল মার্কার সমর্থকদের ধাওয়া দেয়। এরপর ইয়াছিন মিঝির সমর্থকরা চর ফকিরা কো-এইড প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা কেন্দ্রে ইউছুফ সিকদারকে ধাওয়া করে কেন্দ্রের কেচিগেট ও গ্রিল ভেঙে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে এসময় প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশে পুলিশ গুলি ছুড়ে। ওই গুলিতে দুই জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ মনির কে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়। অপর গুলিবিদ্ধ আলাউদ্দিন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে একটি পক্ষ রাজনৈতিক শত্রুতা উদ্ধার করতে প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসাতে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
হাজারী গঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হাওলাদার জানান, মনির পুলিশের গুলিতে মারা গেছেন। অথচ মামলা হয়েছে নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে। প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার হোক। নিরপরাধ মানুষ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন। আইন প্রয়োগকারী সংস্হার প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান।
দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার ইমাম হোসেন জানান, বাহিরে দুই মেম্বার প্রার্থীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এরপর কেন্দ্রের কেচিগেট ভেঙ্গে ভোট কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে। তবে পুলিশের গুলিতে কেউ মারা যায়নি।এঘটানায় সচেতন মহলের প্রশ্ন রয়েছে এমন কি সহিংসতা হয়েছে ? যে পুলিশের গুলি ছুরতে হয়েছে।আর সহিংসতা হলেও পুলিশ উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে গুলি করেছে কি? নাকি কোন মহলকে বাড়তি সুবিধা দিতে গিয়ে ঘটনাস্থলের ডিউটিরত পুলিশ একটি তাজা প্রান কেড়ে নিয়েছে ? এপ্রশ্নের জবাব প্রশাসন দিবে? নাকি প্রশ্ন প্রশ্নই থেকে যাবে?

শশীভূষণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, পরিস্হিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়ে। তবে পুলিশের রাবার গুলিতে কেউ মারা যেতে পারে না। দু’পক্ষের সংঘর্ষে মারা যেতে পারে! এ ঘটনায় নিহত মনিরের পিতা বশির সিকদার বাদী হয়ে ইউছুফ সিকদারের ছেলে রিয়াজ সহ সনাক্ত ১০ জন, অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করে শশীভূষণ থানায় সোমবার বিকেলে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় রিয়াজ সিকদারকে গ্রেফতার করে মঙ্গলবার আদালতে সোপর্দ করা। মামলার পর থেকে ইউছুফ সিকদারসহ তার সমর্থকরা পলাতক রয়েছেন।